৪৬ মিলিয়ন ডলারের ৮২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাইবার অপটিক ক্যাবল প্রকল্পটি চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চল থেকে শুরু করে খুনজেরাব সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করবে এবং এরপর সেটা গিলগিট-বালটিস্তান (জি-বি) দিয়ে খাইবার পাখতুনখাওয়ার মানসেহরা এবং আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরের মুজাফফরাবাদকে সংযুক্ত করবে এবং এরপর সেটা ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডিতে যাবে এবং সেখানকার বিদ্যমান অপটিক্যাল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হবে।
পাকিস্তানের ভেতরে এবং চীনের সাথে তথ্য প্রবাহ, অর্থের প্রবাহ, পণ্য ও সেবার লেনদেনের বর্তমান মাত্রার সর্বোচ্চ ব্যবহার এবং ভবিষ্যতের সরবরাহ চেইনের সমন্বয়নের জন্য এই চীনের সাথে পাকিস্তানের ডিজিটাল সংযোগটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
এটা একইসাথে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে এবং দুই দেশের মধ্যে বহু আইসিডি সমন্বয় সেবার দুয়ার খুলে দেবে। এই সংযোগ ব্যবস্থার মধ্যে অনেক কোমল ও বাহ্যিক অবকাঠামো প্রকল্প রয়েছে, যেমন কাগজবিহনী বাণিজ্যের বিকাশ, ই-কমার্স, ই-গভমেন্ট এখানে বাণিজ্যক পার্ক, সড়ক, রেল, বিমান ও বন্দর নির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারবে।
অন্যদিকে, এই কেবল সংযোগ চীন আর পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বিভিন্ন পর্যায়ে সংযোগ বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা দেবে। চীনের ডিজিটাল টেরেস্ট্রিয়াল মাল্টিমিডিয়া ব্রডকাস্টিং (ডিটিএমবি) প্রযুক্তি গ্রহণের কারণে সেটা সামাজিক সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে।
পাকিস্তানে ডিটিএমবি স্ট্যাডার্ড আসার কারণে সেখানে ডিজিটাল টেলিভিশানের হাই ডেফিনেশান (এইচডি) সম্প্রচার করা সম্ভব হবে, যেটা পাকিস্তানের মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রির জন্য মুনাফা অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করবে এবং চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে উচ্চ রেজল্যুশালের সাংস্কৃতিক বিনিময় অনুষ্ঠানগুলো বিনিময় করা সম্ভব হবে।
চীন-পাকিস্তান সীমান্ত দিয়ে যে সব বাণিজ্যের সুযোগ এখনও কাজে লাগানো যায়নি, সিপিইসি ফাইবার অপটিক্স সেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। খুনজেরাব সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা বড় বাধা হয়ে আছে গিলগিট-বালটিস্তানে ডিজিটাল অবকাঠামোর অভাব। নতুন ফাইবার ক্যাবল চালুর ফলে জি-বি’র স্থলবন্দরে অনলাইনভিত্তিক ওয়েবোক (ওয়েব ভিত্তিক সিস্টেম) কাস্টম সিস্টেম চালু হবে। খুনজেরাব সীমান্ত দিয়ে আসা সকল কার্গোকে পাকিস্তানে প্রবেশের আগে এই স্থলবন্দর দিয়ে পার হতে হয়।
প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে যাতে নতুন সিস্টেম ব্যবহারের আগে যাতে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয়া হয় এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নতুন ওয়েবোক সিস্টেম সম্পর্কে ভালোভাবে ধারণা দেয়া হয়। এই নতুন সিস্টেমটি চীনের কাস্টমস ব্যবস্থার সাথে পাকিস্তানকে আরও বেশি সমন্বয় করবে। ফলে পরিবাহিত পণ্যের ক্ষেত্রে সিস্টেম লসের মাত্রা কমে আসবে এবং চীন পাকিস্তান সীমান্তে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে যে সব দীর্ঘসূত্রিতা রয়েছে, সেগুলো সার্বিকভাবে অনেক কমে যাবে।
৮২০ কিলোমিটার দীর্ঘ চীন-পাকিস্তান ফাইবার অপটিক ক্যাবলটি পাকিস্তানের দক্ষিণের রাওয়ালপিন্ডি থেকে শুরু করে চীন সীমান্তের খুনজেরাব গিরিপথ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং ২০১৮ সালের জুলাই থেকে এটির ব্যবহার শুরু হয়েছে।
২০২০ সালের মধ্যেই গোয়াদার থেকে সমুদ্র তলদেশের ৬,২৯৯ কিলোমিটার ক্যাবল জিবুতি পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে এবং এর মাধ্যমে এশিয়া ও আফ্রিকার মধ্যে ডিজিটাল সিল্ক রোড গড়ে তোলা হবে। একইসাথে, মহাকাশ-ভিত্তিক সিল্ক রোডের অংশ হিসেবে বিআরআই দেশগুলোকে স্যাটেলাইট নেভিগেশান সহায়তা দেয়া হবে। স্পেস সিল্ক রোডের বাইদু ভিত্তিক স্টেশনটি ২০১৭ সাল থেকেই পাকিস্তানে সক্রিয় রয়েছে। ৩০টি বিআরআই দেশের মধ্যে বাইদু দ্রুত অগ্রগতি করছে এবং দেশগুলোকে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত করছে।
পুরো কাজ শেষ হওয়ার পর উচ্চাকাঙ্ক্ষী বৈশ্বিক এই পদক্ষেপের আওতায় বিশেষ স্যাটেলাইট নেভিগেশান সিস্টেম, বাইদু, স্থলে ফাইবার নেটওয়ার্কস ও ৫জি এবং স্থল, সাগর ও মহাকাশে সাবমেরিক কেবলসের মাধ্যমে একটা বহুমুখী ডিজিটাল মেগা-প্রকল্প তৈরি হবে।
হুয়াওয়ে এরই মধ্যে পাকিস্তানে ৫জি নেটওয়ার্ক স্থাপনের জন্য জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে সেখানে তাদের একটা শক্তিশালী বাজার তৈরি হয়েছে। পাকিস্তান টেলিকম অথরিটি (পিটিএ) এরইমধ্যে ২.৬ গিগাহার্টজ, ৩.৫ গিগাহার্টজ এবং মিলিমিটার ওয়েভ ব্যাণ্ড চিহ্নিত করেছে, যেগুলো তারা ৫জি দরপত্রের জন্য ব্যবহার করতে চায়। এটার মধ্যে একইসাথে ফিক্সড এবং মোবাইল ৫জি ব্যবস্থা রয়েছে।
পাঁচ বছর আগে যে ৩জি আর ৪জি সেবা চালু করা হয়েছিল, ৬৫ মিলিয়ন পাকিস্তানি এখন সেটা ব্যবহার করছে। পাকিস্তানে ৫জি আপগ্রেডের কাজ দ্রুত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ৫জি’র জন্য যে আকর্ষণীয় শুল্ক ধরা হয়েছে, সেটা অনেক কাস্টমারকে আকর্ষণ করবে। চীনের আগ্রাসী ৫জি নেতৃত্বকে পশ্চিমা বিশ্বের প্রযুক্তি আধিপত্যের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছে ট্রাম্প প্রশাসন। হুয়াওয়ের ৫জি সরঞ্জামাদি এবং তাদের নেটওয়ার্ক নিয়ে মিত্র দেশগুলোকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। এই সব সরঞ্জামের মাধ্যমে চীন সরকার গোয়েন্দাবৃত্তি চালাতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।
সারা বিশ্বের ৫জি পেটেন্টের মধ্যে বর্তমানে ৩৬ শতাংশই হলো চীনের সরবরাহ করা। মার্কিন প্রচেষ্টা সত্বেও চীনের টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ে এবং জেডটিই পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাজিত করে এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল বাজারে নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছে।
চীন একটা বৈশ্বিক ডিজিটাল সুপারহাইয়ে নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে আগ্রাসীভাবে এগুচ্ছে, যেটার সাথে পাকিস্তানও রয়েছে। ‘ডিজিটাল সিল্ক রোডের’ আওতায় পাকিস্তানে ফাইবার অপটিক ক্যাবল স্থাপনের বিষয়টিও রয়েছে, যেটার মাধ্যমে উত্তরে চীন এবং সাগরতলের কেবলের মাধ্যমে আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের সাথে যুক্ত হবে পাকিস্তান। চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোরের (সিপিইসি) আওতায় যে গোয়াদার বন্দর নির্মিত হচ্ছে, সেই বন্দর থেকে শুরু করে এই সাগরতলের কেবল আফ্রিকা পর্যন্ত বিস্তৃত করা হবে।