ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যালোচনা অনুযায়ী যদি ঘূর্ণিঝড় আম্পান তার গতি ও দিক পরিবর্তন না করে তাহলে আগামী ১৯ মে দিবাগত রাতে বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে।
রবিবার সচিবালয়ে আয়োজিত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ কামাল উপস্থিত ছিলেন।
এনামুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতি রয়েছে। উপকূলীয় জেলাগুলোতে সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখার জন্য এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যেন মানুষজনকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা যায় সে লক্ষে এবার আশ্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থানকালে যাতে খাবারের অভাব না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার এবং গো-খাদ্যের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনে আরও বরাদ্দ দেওয়া হবে। দুর্যোগকালীন বিদ্যুৎ না থাকলে তার বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখার জন্যও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে প্রতিমন্ত্রী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় পূর্ব প্রস্তুতি ও করণীয় বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সচিব ও সিনিয়র সচিব এবং উপকূলীয় জেলাগুলোর জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে অনলাইনে সভা করেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলা ও সম্ভাব্য ক্ষতি এড়াতে সব রকমের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
রবিবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেন, আমরা সব রকমের প্রস্তুতি নিয়েছি। ইতোমধ্যেই গতকাল (শনিবার) জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মিটিং করেছি। তিনি জানান, উপকূলীয় জেলা পর্যায়ে পর্যপ্ত ত্রাণ রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, গতি প্রকৃতি দেখে মনে হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে সংকেত আরও বাড়বে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে থাইল্যান্ড, ‘আম্পান’ এর অর্থ হচ্ছে আকাশ।
ঘূর্ণিঝড়সহ যেকোনো দুর্যোগে স্থায়ী কার্যাদেশ (এসওডি) অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয় সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’আম্পান’ সামান্য উত্তর দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আকারে একই এলাকায় (১২.২ক্ক উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৬.০ক্ক পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) অবস্থান করছে। এটি রবিবার রাত ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৮৫ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১২২০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২১০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ১১৯০ কিঃ মিঃ দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিঃ মিঃ এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১১০ কিঃ মিঃ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৩০ কিঃ মিঃ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিমির মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিমি, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিমি পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল এবং গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের উপকূলের দিকেই অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে সংকেত আরও বাড়াতে হবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
খুলনা : ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ আগামী মঙ্গলবার (১৯ মে) রাতে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে পারে এমন খবরে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে খুলনার ৩৪৯টি আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি উপকূলীয় এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করে উপকূলের বিভিন্ন স্থানে চলছে মাইকিং।
সবচেয়ে বেশি আতঙ্কে রয়েছে খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ ভেড়ীবাঁধ এলাকার মানুষ। তারা আশঙ্কা করছেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পান আঘাত হানলে গ্রামের ভেড়ীবাঁধটি ভেঙে যাবে। এতে লোনা পানিতে পুরো এলাকা ভেসে যাবে।
এদিকে, শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণিঝড়ে দুই লাখ ৩৮ হাজার ৯৫০ জনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা-উপজেলায় পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এরই মধ্যে উপকূলবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।
রবিবার খুলনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে রেড