রেলওয়ের লোকোমোটিভ থেকে ওঠানো ৬৪৪ লিটার তেল নির্ধারিত পিডাব্লিউআই অফিসে না নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করার সময় রেলওয়ে শ্রমিক লীগ ঈশ্বরদী শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকনকে আটক করেছেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তারা। রোকন রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ অফিসের অধীনে ওয়েম্যান হিসেবে কাজ করেন। গতকাল শনিবার দুপুরে ঈশ্বরদী শহরের কদমতলা এলাকার মেসার্স আবেদা এন্টারপ্রাইজের মালিক আহমদ আলীর কাছে তেল বিক্রি করার সময় তাঁকে আটক করা হয়।
এদিকে তেল চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রোকন ও আহমদ আলী রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার উপসহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সিদ্দিকুর রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ হত্যার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এএসআই সিদ্দিকুর ও গোয়েন্দা শাখার হাবিলদার অশোক কুমার বিশ্বাস কালের কণ্ঠকে বলেন, গতকাল শনিবার দুপুরে রেলওয়ের ঈশ্বরদী লোকোমোটিভ থেকে চারটি ড্রামে করে তেল উত্তোলন করে বাইরে বিক্রি করার জন্য দুটি ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে খবর পান তাঁরা। এরপর তাঁরা ভ্যান দুটিকে অনুসরণ করেন। ভ্যান দুটি নির্ধারিত পিডাব্লিউআই অফিসে না গিয়ে শহরের কদমতলার মেসার্স আবেদা এন্টারপ্রাইজ নামক তেলের দোকানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রেলওয়ে কর্মচারী রোকনুজ্জামান রোকনের উপস্থিতিতে দোকানদার আহমদ আলী ড্রামে পাইপ লাগিয়ে তেল আনলোড শুরু করেন। তখন তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। এই সময় রোকন ও আহমদ মিলে এএসআই সিদ্দিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেন। অবস্থা বেগতিক দেখে অতিরিক্ত ফোর্সের জন্য খবর দেওয়া হলে নিরাপত্তা বাহিনীর অন্য সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে তেলভর্তি চারটি ড্রামসহ রোকনুজ্জামানকে আটক করে নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যালয়ে নিয়ে যান। এএসআই সিদ্দিক বলেন, তাঁকে লাঞ্ছিত করা ও হত্যার হুমকি দেওয়ায় রোকনুজ্জামানের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হবে।
রেলওয়ের একাধিক সূত্র অভিযোগ করে জানায়, ওয়েম্যান রোকনুজ্জামান রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে পিডাব্লিউআই অফিসে গ্যাংয়ে অতিরিক্ত কাজের নামে তেল চুরির সঙ্গে জড়িত। এর আগেও রোকন স্টেশনে ট্রেনের যাত্রীদের মারপিট করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তাঁর বাবা আব্দুল ওহাব স্টেশনে পয়েসম্যান কর্মচারী। কিন্তু প্রায় ১৬ বছর ধরে তিনি কাজ না করেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে বেতন, বোনাস, ওভারটাইম উত্তোলন করে আসছেন। এ নিয়ে রেলওয়ের স্থানীয় অন্যান্য কর্মচারীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা বিরাজমান আছে বলে সূত্রগুলো দাবি করে।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট শাহ আলম বলেন, তেল চুরি ও নিরাপত্তা বাহিনীর গোয়েন্দা শাখার এএসআই সিদ্দিকুর রহমানকে লাঞ্ছিত করার সত্যতা পাওয়া গেছে। এএসআই সিদ্দিককে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পাকশী রেলওয়ে সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মো. শিপন আলী বলেন, এই বিষয়ে রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় ব্যবস্থাপকের (ডিআরএম) নির্দেশে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।