করোনা পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দরে সরকারি জায়গা দখল করে চলছে পাকাঘর নির্মাণের কাজ। আদালত ছুটি থাকায় আইনগত জটিলতায় প্রতিকার করতে পাচ্ছেন না রাষ্ট্রপক্ষ।
ভোমরা ইউনিয়ন ভুমি অফিস সূত্রে জানান গেছে, লক্ষীদাড়ি মৌজার ১১৩৫ দাগের নয় শতক ও ১১৩৪ দাগের ১০ শতকের মধ্যে নয় শতক মোট সরকারি ১৮ শতক খাস জমি ১৪/৯৮ নং ইজারা কেসের মাধ্যমে বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস সাতক্ষীরা শাখার নামে ইজারা দেওয়া হয়। খালেক গাজীর বাড়ি থাকায় একশতক বাদ দেওয়া হয়। ১১৩৫ দাগের এক শতক জমিতে সিকিউরিটি রুম ছিল। ওই এক শতক বাদে দু’ দাগের ১৭ শতক জমি বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস এর নামে বাংলা ১৪২৫ সাল পর্যন্ত ইজারা নবায়ন রয়েছে। সিকিউরিটি রুম থাকার কারণে একশতক জমি ইজারা দেওয়া হয়নি বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস এর নামে। ১১৩৫ দাগের বাংলাদেশ এ্যাডমিনেসট্রেটিভ সার্ভিস এর আট শতক জমিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সেবাকুঞ্জ নির্মাণ করা হয়। ওই জমির একশতক অংশে সিকিউরিটি রুমসহ পিছনের ১১৩৪ দাগের আট শতক জমি ১৯৬৫ সালের একটি বিনিময় দলিলের মাধ্যমে লক্ষীদাড়ি গ্রামের মানাউলাহ গাজীর ছেলে খালেক গাজী দাবি করলেও জেলা প্রশাসকের বিশেষ শাখায় মামলার মাধ্যমে দলিল ভ্যালিড করেননি। বিনিময় দলিলের কার্যকারিতা রাখতে একপর্যায়ে খালেক গাজীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে একটি অনিবন্ধিত আমমোক্তার নামা তৈরি করেন খালেক গাজীর স্ত্রী ছকিনা খাতুনের নামে। ছকিনা খাতুনের নামে ওই জমি আমমোক্তারনাম দেখানো হলেও স্বামী স্ত্রী বাদি হয়ে ওই জমির মালিকানা দাবি করে সাতক্ষীরা সহকারি জজ আদালতে একই বিষয়ের উপর দেঃ ২৬৩/৯২, ৬৮/৯৮ ও ১৩৮/২০০২ নং মামলা করেন। এসব মামলা খারিজ হয়ে যায়। এদিকে খালেক গাজীর মেয়ে বর্তমানে শ্যামনগরের ভুরুলিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিওন রোকেয়ার স্বামী আতিয়ার রহমান ২০০৫ সালে ১৪/৯৮ ভিপি ইজারা কেসের মাধ্যমে ১১৩৫ দাগের নয় শতক জমি ইজারা নেন। ওই নয় শতক জমি ‘ক’ তপশীলের অন্তর্ভুক্ত হলেও খালেক গাজীর স্ত্রী ছকিনা, মেয়ে রোকেয়া ও ছেলে ইদ্রিস বাদি হয়ে নিয়ম বহির্ভুতভাবে সাতক্ষীরার সাবজজ প্রথম আদালতে দেঃ ১৩৩/১৮ নং মামলা করেন। মামলায় ডিপি ১/১ অর্পিত সম্পত্তির খতিয়ানের পরিবর্তে ভুয়া ২৬৪ খতিয়ান দেখানো হয়েছে। মামলায় জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজনকে বিবাদী করা হয়। ট্রাইব্যুনালের পরিবর্তে সাবজজ প্রথম আদালতে মামলার করার চ্যালেঞ্জ জানান রাষ্ট্রপক্ষ। এরই মধ্যে ছকিনা ও তার ওয়ারেশরা এক তরফা শুনানী করে একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পান। মামলা বাতিল ও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন(৭৮/১৮) করলে তা বিচারের জন্য অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে বদলী করা হয়। যা’ বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।
এদিকে ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের পিওন রোকেয়া খাতুনের কথামত তৎকালিন তহশীলদার আবু বকর ছিদ্দিক খালেক গাজীর বিনিময় দলিল বৈধ উলেখ করে খাজনা কাটার বিরুদ্ধে ভোমরার অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার সিরাজুল ইসলাম দূর্ণীতি দমন ব্যুরোতে অভিযোগ করেন। অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় খালেক গাজী ও আবুবক্কর ছিদ্দিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। এ মামলা জেলে যেয়ে মারা যান আবু বক্কর ছিদ্দিক। পরে খালেক গাজী মারা গেলে মামলার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। সিকিউরিটি রুম ইদ্রিস তালা মেরে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করলে তৎকালিন সদর সহকারি ভূমি কমিশনার তাহমিনা খাতুন তালা ভেঙে দেন।
ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশীলদার মহসিন আলী বলেন, স¤প্রতি আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও করোনা ভাইরাসে আদালত বন্ধ থাকার সূযোগকে ব্যবহার করে খালেক গাজীর ছেলে ইদ্রিস সিকিউরিটি রুমসহ নয় শতক জমি জবরদখল করে গত বৃহষ্পতিবার থেকে সেখানে ভাড়াটিয়া বাহিনী ঠিক করে পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। অবৈধ দখল ও অবৈধ নির্মাণে বাধা দিলেও তারা শুনছে না। বিষয়টি নিয়ে তারা আদালতে যেতে ও পারছেন না। ফলে সরকারের কোটি টাকার সম্পদ জবরদখলের উপক্রম হয়েছে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে ভোমরা বন্দরে গেলে দেখা গেছে ইদ্রিস আলীসহ কয়েকজন দাঁড়িয়ে থেকে পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ছাদ তৈরির কাজ তদারকি করছেন। এ সময় আইনজীবী অ্যাড.সালাম বলেন, রোকেয়ার স্বামী যে জমি ডিসিআর নিয়েছে সে জমি কিভাবে রোকেয়া ও তার স্বজনরা মালিকানা দাবি করলে তা টিকবে না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে লক্ষীদাঁড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, বিনিময় দলিল মুলে বাবা ও আমমোক্তারনামা মুলে মা ওই জমির মালিক। আদালতের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন তাই তিনি সেখানে পাকা দোকান ঘর বানাচ্ছেন। স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে তাকে ঘর নির্মাণে বাধা দেওয়া হলেও কোন নোটিশ দেওয়া হয়নি। ভোমরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার রফিকুল ইসলাম তার কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করেছিলেন। তিনি দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় তাদেরকে এভাবেই হয়রানি করা হচ্ছে। তবে মামলা ও জমির কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি আপত্তি জানান।