২০১৮ সালের ৫ জুলাই পাকিস্তান নৌবাহিনীর (পিএন) জন্য চারটি মিলজেম (যা জিন্নাহ-ক্লাস নামেও পরিচিত) রণতরী (ফ্রিগেট) তৈরির জন্য পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তুরস্কের মিলিটারি ফ্যাক্টরি অ্যান্ড শিপইয়ার্ড লিমিটেড (আসফাত)-এর সঙ্গে চুক্তি করে। ২০২৪ সালের মধ্যে চারটি যুদ্ধজাহাজই হাতে পাবে বলে জানিয়েছে পিএন। ২০২৩ সালে প্রথমটি পাওয়া যাবে। দুটি জাহাজ তুরস্কে আর দুটি পাকিস্তানে প্রযুক্তি স্থানান্তরের মাধ্যমে তৈরি করা হবে।
এই চুক্তির মূল্য ১ বিলিয়ন থেকে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। দাম কিছুটা বেশি হলেও মিলজেম প্রগ্রামকে বলা হয় একই সঙ্গে আধুনিক জাহাজ ও প্রাপ্রাইটারি ফ্রিগেট ডিজাইন। এর মানে হলো ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে সহায়তা করবে আসফাত। প্রতিপক্ষ হলো মেরিটাইম টেকনলজি কমপ্লেক্স, করাচি শিপইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস (কেএসইডব্লিউ) ও নেভি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট ইন্সটিটিউট (এনআরডিআই)। এই ফ্রিগেটের মেধাস্বত্বের (আইপি) অধিকারী হবে পিএন।
চতুর্থ মিলজেম হবে যৌথ ডিজাইন করা লিড শিপ। এর ফলে পিএন এই জাহাজের আইপি কিনে নিতে পারবে। এই চতুর্থ শিপটি পিএনের পরবর্তী প্রজন্মের ফ্রিগেটের ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। এর ডিজাইনের মালিকানা লাভ করায় পাকিস্তান ইচ্ছেমতো যত খুশি সংখ্যক এ ধরনের ফ্রিগেট তৈরি করতে পারবে।
উচ্চপ্রযুক্তির সম্পদ মিলজেম
যতটুকু জানা গেছে তাতে মনে হয় পিএন তার মিলজেম জাহাজগুলো হাইটেক ও ইনটিগ্রেটেড সিস্টেমে সজ্জিত করতে চায়। সিচুয়েশনাল এওয়ারনেস থেকে শুরু করে ইলেক্ট্রনিক ওয়ারফেয়ার (ইডব্লিউ) থেকে গোলা বর্ষণের ক্ষমতা পর্যন্ত সবদিক দিয়ে। মিলজেমের পাশাপাশি টাইপ ০৫৪এ/পি পিএনের সারফেস ওয়ারশিপের স্টান্ডার্ড ঠিক করবে।
সাবসিস্টেম
পিএনের বেশিরভাগ মিলজেম সাবসিস্টেম তুরস্ক থেকে আসবে। এই কর্মসূচিতে সাবসিস্টেম সরবরাহ করতে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আসেলসানের সঙ্গে ১৯১ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি হয়েছে। এই সাবসিস্টেম বেছে নেয়ার অন্যতম কারণ হলো এতে পিএন সহজে ঋণ নিতে পারবে এবং তুরস্ক এরই মধ্যে এসব সাবসিস্টেম ব্যবহার করায় সেগুলোর সংযোজন মূল্যও কম হবে।
তাছাড়া ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তুরস্কের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে এগুলো তৈরি করা হয়েছে। ফলে এখানে মান ও কার্যকারিতার বিষয়টিও জড়িত। তুরস্কের মাধ্যমে পাকিস্তানের পক্ষে পশ্চিমা ও ন্যাটো মানের যে প্রযুক্তি হাসিল করা সম্ভব তা ইউরোপের অন্য কোন দেশের মাধ্যমে সম্ভব নয়।
তুরস্কও পাকিস্তানের কাছে তার সাবসিস্টেম উন্মুক্ত করে দিতে রাজি হয়েছে, যাতে পিএন তার অস্ত্র ব্যবস্থা, ডেটা লিংক ও অন্যান্য সিস্টেমে এগুলো যুক্ত করতে পারে।
আসেলসান স্মার্ট-এস এমকে২
পিএন মিলজেমের প্রধান সার্চ অ্যান্ড টার্গেটিং রাডার হবে আসেলসান স্মার্ট-এস এমকে২। এর ডিজাইনার নেদারল্যান্ডের থালেস গ্রুপ। তবে আসলেসান লাইসেন্স নিয়ে এগুলো তৈরি করে। এর বাইরেও রাডারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ তৈরি করেছে আসেলসান।
আসেলসান স্মার্ট-এস এমকে২ হলো একটি অ্যাকটিভ ফেজড অ্যারে রাডার, যার পাল্লা ২৫০ কিলোমিটার। এই রাডার ৫০০ সংখ্যক পর্যন্ত সারফেস টার্গেট শনাক্ত ও অনুসরণ করতে পারে। এটা ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে মিসাইল ও ২০০ কিলোমিটার দূর থেকে মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট অনুসরণ করতে পারে।
এই রাডারে এন্টি-জ্যামিং ব্যবস্থা রয়েছে।
আসেলসান আরেস-২এনসি
পিএনের আগস্টা ৯০বি সাবমেরিনের জন্য এই ইলেক্ট্রনিক সাপোর্ট মেজার্স (এএসএম) সুটের একটি ভেরিয়েন্ট হলো আসেলসান আরেস-২এনসি। এই স্যুট দিয়ে মিলজেম শত্রুর অজান্তে তার রাডার ও যোগাযোগ সিগন্যাল রেকর্ড করতে পারবে। এটা শত্রুর রাডার জ্যাম করে দেয়ার কাজেও লাগানো যাবে।
এ ধরনের আরো বহু অত্যাধুনিক সিস্টেমে সজ্জিত থাকবে মিলজেম ফ্রিগেট।