এমরান আহমেদ (ফেঞ্চুগঞ্জ) সিলেটঃঃ ভালো নেই সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মধ্যবিত্তরা কাঁদছে মুখ লুকিয়ে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীণ এবং গৃহবন্দী হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। এতে করে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে গৃহবন্দী হয়ে পরা মানুষগুলোর। কিন্তু বন্ধ হয়নি তাদের ব্যয়ের পথ। নিন্ম আয়ের মানুষগুলোর হাতে খাবার এবং প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তুলে দিচ্ছেন অনেকেই। সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠনগুলো নিন্ম আয়ের মানুষদের সহযোগিতায় হাত বাড়িয়েছে। তবে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর পরিবারগুলোর পাশে কেউ নেই। উচ্চ বিত্তদের টাকার অভাব নেই ফলে তাদের অভাবও নেই এবং তাদের কোন প্রকার টেনশন নেই।
আর মধ্যবিত্তদের নেই ব্যাংক ব্যালেন্স বা জমানো অর্থ,সাহয্য-সহোযোগিতার হাত বাড়াচ্ছেনা কেউ। ঘরে খাবার না থাকলে ও মধ্যবিত্তরা লোক লজ্জায় কিছু বলতে পারছেনা। লোকচক্ষুর ভয়ে তারা লাইনে দাঁড়িয়ে কোথাও ত্রাণ আনতে যেতে পারছেন না। আত্মসম্মানবোধ তাদেরকে বাধা দেয়। ঘরের মধ্যে তারা না খেয়ে থাকলেও বের হচ্ছেন না। এক বুক কষ্ট আর ব্যথা নিয়েই জীবনের বাস্তবতা মোকাবেলা করছেন তারা। বাদেদেউলী গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক এহসানুল হক জায়েদ বলেন,বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর মিছিল। এ প্রজন্ম একসঙ্গে এতো মানুষের মৃত্যু আগে কখনো দেখেনি। সব সময় তাড়া করে বেড়াচ্ছে মৃত্যু।সব ধরনের জনসমাগম বন্ধ রাখার জন্য গণপরিবহন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মজীবী মানুষ এখন কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে তারা কেউ বের হতে পারছে না। মূলত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে বাংলার ১৮ কোটি মানুষ।
১ নং সদর ইউনিয়নের এক মধ্যবিত্ত বলেন, কিছু টাকা জমানো ছিলো তাও শেষ হবার পথে অপরদিকে রমজান মাস শুরু পরেই আসছে ঈদ কিভাবে ঈদ করবো রুজি রোজগার নেই। অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসে সংসারের খরচটাও একটু বেশী। এভাবে চলতে থাকলে করোনায় নয় না খেয়েই মরতে হবে আমাদের। কারন লাজ- লজ্জায় আমরা কারো নিকট সাহয্য চাইতে পারছিনা আবার কেউ সাহায্যের হাত ও বাড়িয়ে দিচ্ছেনা।
২ নং মাইজগাঁও ইউনিয়নের এক নারী বেশ আক্ষেপ নিয়ে বলেন,বড় লোকের টাকা আছে,গরীবরা ত্রাণ পাচ্ছে আর মধ্যবিত্তরা না খেয়ে মুখ লুকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে। মধ্যবিত্তরা যেন এ দেশের নাগরীকদের কাতারে পরে না। মধ্যবিত্তরা যদি সরকারের হিসেবের খাতায় থাকতো তাহলে সরকারী ভাবে তালিকা তেরী করে মধ্যবিত্তদের সহোযোগিতা করতো।
৩ নং ঘিলাছড়া ইউনিয়নের এক যুবক বলেন,মধ্যবিত্তদের পাশে আজ কেউ নেই। সবাই মনে করছে মধ্যবিত্ত পরিবার গুলো ভালো আছে কিন্তু তারা তো কোনো সংস্থা বা দলীয় নেতা কর্মীদের সামান্যতম সাহায্য পান না কারন তারা তো লাইনে দাড়াতে সক্ষম না।
এ পরিস্তিতিতে সরকার ও অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর একটু দৃষ্টি তাদের প্রতি রাখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
৪ নং ইউনিয়নের এক মধ্যবিত্ত বলেন,গরিবদের কান্না সবাই শুনে কিন্তু মধ্যবিত্তদের কান্না শুধু চার দেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ।লোকলজ্জার কারনে তারা কারো কাছে হাত পাততে পারে না। এদের সাহায্য করার জন্য কেউ এগিয়ে আসে না, আবার এরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে সাহায্য নিবার পাত্র নয়।
৫ নং ইউনিয়নের আরেক মধ্যবিত্ত বলেন,এটা কোন জীবন হলো সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। চক্ষু লজ্জায় কষ্টগুলো প্রকাশ করা যায় না, এরকম আর কতদিন চলবে আমাদের জীবন যুদ্ধ কবে হবে এর অবসান ।
আমাদের কোনো কষ্ট নেই। আছে শুধু সুখ ।কিন্তু এর আড়ালে আমরা যে কত কষ্টে জীবন-যাপন করি, তা বোঝানো যায়না। কেউ বোঝারও চেষ্টা করেনা ভাই মানুষের কাছে কিছু বলাও যায় না কতো যে কষ্ট একমাত্র মধ্যবিত্তরা বুঝে।