শ্রীলংকার সাধারণভাবে বাক স্বাধীনতার উপর যে দমন অভিযান চলছে, সেখানে মুসলিমরা বাছবিচারহীনভাবে গ্রেফতারের শিকার হচ্ছে হলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
লংকান সরকার কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে মুসলিম-বিরোধী শেষকৃত্যের নতুন নীতি গ্রহণের পরপরই দুজন সুপরিচিত মুসলিম ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এতে করে বৌদ্ধপ্রধান দেশটিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
৯ এপ্রিল রামজি রাজিককে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনাল কনভেনশান অন সিভিল অ্যাণ্ড পলিটিক্যাল রাইটসের (আইসিসিপিআর) অ্যাক্টের অধীনে গ্রেফতার করা হয়। ফেসবুক পোস্টে আদর্শিক লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করার পর তাকে গ্রেফতার করা হলো।
রাজিক সবসময় তার পোস্টে মুসলিম ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির কথা বলে আসছেন। সম্প্রতি সরকার সকল কোভিড-১৯ রোগে মৃত ব্যক্তিদেরকে পুড়িয়ে ফেলার যে নীতি গ্রহণ করেছে, সেটি ইসলামী রীতিনীতির বিরোধী হওয়ার সেটার সমালোচনা করেন রাজিক।
২ এপ্রিল রাজিক ফেসবুক পোস্টে সিংহল ভাষায় লেখেন: “মুসলিমরা চারদিক থেকে বর্ণবাদী বিভিন্ন গ্রুপের কাছে ঘেরাও হয়ে আছে… এখন দেশের জন্য এবং সকল নাগরিকের জন্য আদর্শিক জেহাদের প্রস্তুতি নেয়ার সময়, এখানে অস্ত্র হলো কলম আর কি-বোর্ড”।
বিশিষ্ট অধিকার কর্মী সামপাথ সামারাকুন বলেছেন রাজিক এমন কোন কথা লেখেনি, যেটাতে আইসিসিপিআরের কোন বিধান লঙ্ঘিত হয়েছে এবং তিনি এই আইনের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ করেন।
১৪ এপ্রিল পুলিশ বিশিষ্ট আইনজীবী হেজাজ হিজবুল্লাহকে প্রিভেনশান অব টেররিজম অ্যাক্টের অধীনে গ্রেফতার করে। ২০১৯ সালে ইস্টার সানডে হামলার সাথে জড়িত সন্দেহে পুলিশ সম্প্রতি যে ছয়জন ব্যক্তিকে আটক করেছিল, তাদের একজন ছিলেন হেজাজ।
পুলিশ একইসাথে ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করার দায়ে বেশ কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে।
পুলিশ কলম্বোর কাছে মাহারাগামা এলাকায় এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর বাড়িতে অভিযান চালায়। কোভিড-১৯ বিষয়ক প্রেসিডেন্সিয়াল টাস্ক ফোর্সের প্রধানের দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের ছোট ভাই বাসিল রাজাপাকসাকে দেয়ার সমালোচনা করার অভিযোগে ওই অভিযান চালানো হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া ডিরেক্টর মীনাক্ষি গাঙ্গুলি বলেন, “গত বছরের ভয়াবহ ইস্টার সানডে হামলায় জড়িতদেরকে বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব রয়েছে শ্রীলংকান কর্তৃপক্ষের, কিন্তু গ্রেফতার হতে হবে আইনসম্মত উপায়ে এবং একটা পুরো সম্প্রদায়ের নিন্দা করা যাবে না। সম্প্রতি পরিচিত মুসলিম ব্যক্তিত্বদের গ্রেফতার, এবং সেই সাথে সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ এবং ক্রমবর্ধমান মুসলিম বিদ্বেষী ঘৃণামূলক বক্তব্যের কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে”।
সমালোচকদের বক্তব্য শোনা উচিত
শান্তি ও আন্ত-সম্প্রদায় বিনিময়নের বিষয়ে কাজ করে ন্যাশনাল পিস কাউন্সিল (এনপিসি)। তারা বলেছে, যে সময়ে সোশাল ও মূলধারার মিডিয়াগুলোতে সুনির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য দিয়ে ভরে গেছে, সে অবস্থায় রামজি রাজিককে আলাদাভাবে গ্রেফতার করাটা খুবই অন্যায়। তারা সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে যাতে রাজিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
এনপিসি বলেছে, “বর্তমান পরিস্থিতির মতো সঙ্কটকালীন সময় মুক্ত মত প্রকাশ এবং সমালোচনার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে মানুষের যন্ত্রণার বিষয়টি সবাই শুনতে পাচ্ছে”।
জাতিসংঘের ধর্মীয় ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা বিষয়ক বিশেষ দূত শ্রীলংকা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন যাতে ইসলামের কবর দেয়ার ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানো হয় এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো বন্ধ করা হয়।
হিউম্যান রাইটস কমিশন অব শ্রীলংকা (এইচআরসিএসএল) জোর দিযে বলেছে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার সীমিত করার ক্ষেত্রে যে কোন পদক্ষেপ নেয়া হলে, সেটাও অবশ্যই আইনি ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে নিতে হবে।