মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আবারও সম্ভবত মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। সেখানে আরও যাতে অপরাধ না হয়, সেজন্য ব্যবস্থা নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি জোর আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার দেয়া এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াঙ্ঘি লি বলেন, সঙ্ঘাত-কবলিত রাজ্যগুলোতে সামরিক বাহিনী বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উপর চরম দুর্দশা চাপিয়ে দিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে প্রচেষ্টা জোরদারের আহ্বান জানান যাতে সেখানে ২০১৭ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্য থেকে শুরু করে এখন পাশের চিন রাজ্যেও অভিযান জোরদার করেছে সামরিক বাহিনী।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে এমনিতেই গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে আগস্টে সামরিক বাহিনীর বর্বর নিধন অভিযান থেকে প্রাণ বাঁচাতে সাত লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম পাশ্ববর্তী বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। চলতি বছরের শুরুর দিকে, জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত মিয়ানমারকে গণহত্যা কেন্দ্রিক সহিংসতা বন্ধ করার নির্দেশনা দেয় এবং এ ব্যাপারে অগ্রগতি জানাতে নির্দেশ দেয়া হয় সরকারকে।
লি’র বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, সঙ্ঘাতপীড়িত এলাকার সমস্ত জাতিগত গোষ্ঠিগুলোকে এখন টার্গেট করেছে সামরিক বাহিনী। করোনাভাইরাস সঙ্কটের সময় যেখানে সারা বিশ্বেই অস্ত্রবিরতির আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, সেখানে তাতমাদাও নামে পরিচিত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির (এএ) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের তীব্রতা আরও বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে আরও বেশি স্বায়ত্বশাসনের দাবিতে লড়াই করছে এই জাতিগত গ্রুপটি।
লি বলেন, সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক বিমান ও কামান হামলায় শুধু বহু শিশুসহ বেসামরিক মানুষদের আহত আর হত্যাই করেনি, একই সাথে বেশ কিছু হতাহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সুবিধার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। একটি ঘটনায় এক টিনএজ বালক সামরিক চেকপোস্টে মারা গেছে। তাকে বহনকারী হাসপাতালমুখী গাড়িটিকে সেনাবাহিনী জোর করে আটকে রাখায় মারা যায় ওই ছেলেটি। এটা স্পষ্ট নয় যে, কিভাবে ছেলেটি আহত হয়েছিল।
এই সব হামলা ২০১৭ সালের রোহিঙ্গা জনগণের উপর হামলার কথা মনে করিয়ে দেয়। স্কুল, ঘরবাড়ি, বৌদ্ধ মন্দিরের উপর হামলা করা হয়েছে, এবং এমনকি একটি গ্রামের ৭০০ বাড়ি ধ্বংস করে পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। সামরিক বাহিনী একই সাথে আরাকান আর্মির সাথে জড়িত সন্দেহে বহু ডজন মানুষকে গুম করেছে, গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করে হত্যা করেছে। পুরো গ্রামের লোকজন সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে গেছে।
লি রাখাইন ও চিন রাজ্যে চলমান যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ব্যাপারে তদন্তের আহ্বান জানান, যাতে অপরাধীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়। একই সাথে বেসামরিক মানুষদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘের প্রতি জোর দাবি জানান লি।