করোনাভাইরাসের সাধারণ ছুটিতে আয়-রোজগার বন্ধ থাকায় নগদ টাকা ভেঙে খাচ্ছে মানুষ। সাধারণ মানুষের ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া বন্ধ হওয়ার পাশাপাশি নগদ টাকা তোলার পরিমাণ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোতে টাকা তোলার চাপ বেড়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আমানত সংকটে পড়বে ব্যাংক খাত।
এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী রেজা ইফতেখার বলেন, সাধারণ ছুটিতে যাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, তারাই নগদ টাকা ভেঙে খাচ্ছেন। অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা টাকা জমাতে এখন আর ব্যাংকমুখী হচ্ছেন না।
বুধবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বলেন, আমানত তোলার চাপ কমাতে আমার শাখাটি সপ্তাহে দু’দিন খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকে টাকা নেই গ্রাহককে বলা যাচ্ছে না। তাই পর্যায়ক্রমে একইভাবে আমাদের সব শাখা সপ্তাহে দু’দিন করে খোলা রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সাধারণ ছুটির এক মাস যেতে না যেতেই ৫০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র আমানতকারী ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়ে গেছেন। ব্যাংকে নগদ টাকার সরবরাহ কমে গেছে। মানুষ এখন আর ব্যাংকমুখী হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আমানত সংকটে পড়তে পারে ব্যাংকগুলো।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মানুষের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেলে জমানো নগদ টাকার ওপরই ভরসা রাখে। সেটা ফুরিয়ে গেলে হাত দেয় ব্যাংকে জমানো টাকায়। সাধারণ ছুটি এক মাসের বেশি সময় ধরে চলছে। এতে অধিকাংশ মানুষের আয় বন্ধ। অনেকেই বেতন পাচ্ছেন না। অনেকের চাকুরি গেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে। তাই সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া ছাড়া এখন আর মানুষের কোনো উপায় নেই। কারণ বাড়ি ভাড়া, সংসারের খরচ মেটাতে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার সঞ্চয়ই এখন ভরসা।
মানুষের একটি স্বভাবজাত অভ্যাস আছে। সেটা হলো যখন কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস পায়, তখনই কাছে নগদ টাকা রেখে দেয়। কারণ নগদ টাকা কাছে থাকলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের সাহস বিরাজ করে। সেই দিক থেকেও অনেকেই ব্যাংক থেকে টাকা তুলে কাছে রেখেছেন।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আহসান হাবীব সাধারণ ছুটি শুরুর দিন থেকে বাসায় অবস্থান করছেন। মার্চ মাসের বেতন পাননি। এপ্রিল মাস একদিনও অফিস করেননি। কাজকর্ম বন্ধ। এ অবস্থায় জমানো টাকা দিয়েই সংসারের খরচ মেটাচ্ছেন। তবে এই বেতন না পেলে ঈদের আগে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হবে বলে মনে করেন হাবীব।
নগদ টাকার সরবরাহ ঠিক রাখতে সাধারণ ছুটির শুরুতে ব্যাংকগুলোর যে সংখ্যক শাখা খোলা রাখা হতো, এখন তার চেয়ে অনেক কম শাখা সিরিয়াল মেনে সপ্তাহে দু’দিন করে খোলা রাখা হচ্ছে। বেসরকারি খাতের একটি ব্যাংক সাধারণ ছুটির শুরুতে ৮০টি শাখা খোলা রাখলেও এখন তারা মাত্র ২০টি শাখা খোলা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ব্যাংকগুলোকে নগদ টাকার সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখা ও লেনদেন সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ঘরে বসে লেনদেনের সুবিধার্থে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেন সীমাও বাড়ানো হয়েছে।