ভারতের গ্রামাঞ্চলে ভূমি জরিপের কাজে ড্রোন ব্যবহারের পরিকল্পনা করেছে সরকার। এতে জমির মালিকানা ইস্যুতে কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হতে পারে। কিন্তু সরকারের এই উদ্যোগ ঐতিহ্যগতভাবে যেসব প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবসময় জমির মালিকানা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে তাদেরকে আরো বঞ্চনার দিকে ঠেলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত সপ্তাহে স্বামীত্ব যোজনা বা মালিকানা প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এর মাধ্যমে এই প্রথমবারের মতো ড্রোন ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন রাজ্যে গ্রামীণ খানা জরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
পরীক্ষামূলকভাবে ছয়টি রাজ্যে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে। জমির মালিকানা স্বত্ব ঋণ গ্রহণের কাজে ব্যবহার করা যাবে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। এতে রাজ্যের আরো রাজস্ব আয় হবে, যা দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ ও সরকারি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যাবে।
এক ভিডিও বার্তায় মোদি বলেন, গ্রামীণ এলাকায় বেশিরভাগ আবাসিক সম্পত্তির মালিকানার যথাযথ কাগজপত্র নেই। জনগণকে মালিকানা স্বত্ব প্রদানের মাধ্যমে এই অবস্থার পরিবর্তন করা যেতে পারে।
ব্রিটিশ আমলে ভারতে কৃষিভূমির জরিপ হয়। যেখানে বাড়িঘর তৈরি করা হয় বা যাকে গ্রাম বলা হয় সেগুলো আবাদি ভূমি নামে পরিচিত ছিলো। কিন্তু এমন এলাকা আধা বর্গকিলোমিটারের কম হলে তা পতিতজমি হিসেবে বিবেচনা করে তা জরিপের বাইরে রাখা হয়।
ভারতে জনসংখ্যা বেড়ে গিয়ে কৃষি জমির উপর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায়, সড়ক ও বিমান বন্দর নির্মাণের প্রয়োজন হওয়ায় ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ বাড়তে থাকে। দেওয়ানি আদালতে মামলার দুই-তৃতীয়াংশ ভূমি ও সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ সম্পর্কিত।
২০০৮ সালে আধুনিক ভূমি রেকর্ড কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। তাতে সব ভূমি নতুন করে জরিপ করা হলেও এ সম্পর্কিত সব তথ্য অনলাইনে প্রকাশ ২০২১ সাল পর্যন্ত স্থগিত রাখা হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ বলছে যে এর ফলে ভূমি কেনাবেচার বিষয়টি ভালোভাবে নজরদারি করা যাবে। এতে রাজস্ব আয় বাড়বে এবং দুর্নীতি কমবে।
মহারাষ্ট্র ও উড়িষ্যার মতো কিছু রাজ্য গ্রামীণ এলাকার আবাসিক জমি জরিপ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
কিন্তু ভূমি বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভূমি রেকর্ড ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেয়া হলে নিম্ন বর্ণের যেসব সম্প্রদায় ঐতিহ্যগতভাবে ভূমি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে তারা মালিকানার বাইরে পড়ে যেতে পারে। ফলে তারা আরো উচ্ছেদপ্রবণ হয়ে পড়বে।
ভূমি অধিকারকর্মী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ড. ইএএস শর্মা বলেন, গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয় মূলত কর্মকর্তাদের দ্বারা ভূমি রেকর্ড রদবদল হওয়ার কারণে। পাশাপাশি ভূমির হোল্ডিং যথাযথভাবে জরিপ না করার কারণেও এটা হয়ে থাকে।
তিনি বলেন, ডিজিটাইজেশন পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটাবে কারণ এতে ক্ষুদ্র চাষীদের জন্য স্বচ্ছতা কমে যাচ্ছে। ডিজিটাল রেকর্ডে তাদের প্রবেশ সুযোগ সীমিত।
শর্মা বলেন, ভূমি জরিপ করতে হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং সব অধিবাসী রেকর্ড পর্যালোচনা করবেন। তা নাহলে বিরোধ দূর হবে না এবং প্রভাবশালীরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে শোষণ অব্যাহত রাখবে।
তাছাড়া মালিকানায় যৌথভাবে নারীদেরকেও স্বত্ব দেয়া হবে কিনা সে কথা স্বামীত্ব যোজনায় উল্লেখ নেই।
দিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ-এর ফেলো নমিতা ওয়াহি বলেন, আদিবাসী জনগণ যেভাবে প্রথাগতভিত্তিতে স্বত্ব লাভ করেন সেগুলোর কোন লিখিত রেকর্ড নেই। সেগুলোকে স্বীকৃতি দিতে হবে।
তার মতে দলিত, আদিবাসী ও নারীদের ব্যাপারে প্রোঅ্যাকটিভ উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে তাদের মালিকানা স্বত্বের বাইরে পড়ে যাওয়ার বিপদ তৈরি হবে।