করোনাভাইরাস মহামারীর আড়ালে দক্ষিণ চীন সাগর এবং ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল – উভয় জায়গাতেই আগ্রাসী তৎপরতা বাড়িয়েছে চীন। ফলে শুধু চীনের ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যেই নয়, বরং ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেও এটা নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
গত রোববার চীন দক্ষিণ চীন সাগরের ৮০টি ভৌগলিক বিষয়কে নতুন করে নাম দেয়। ২৫টি দ্বীপ ও প্রবাল প্রাচীরের প্রচলিত নাম এবং ৫৫টি সাগরতলের ভৌগলিক জিনিসের নাম বদলে দিয়েছে চীন। এই সিদ্ধান্ত এই অঞ্চলে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে, দক্ষিণ চীন সাগরের কিছু অংশে চীন তাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। নয়টি ড্যাশলাইন দিয়ে সীমাবদ্ধ এলাকাতে এটা করার চেষ্টা করছে চীন, যেটা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অবৈধ। তালিকাভুক্ত দ্বীপগুলোর মধ্যে রয়েছে সানঝিজাই, যেটা দক্ষিণ চীনের হায়নান প্রদেশের সানশা শহরের ইয়োংশিং দ্বীপের উত্তরের একটি ছোট দ্বীপ।
যে সূত্রগুলো এই সব পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে, তাদের মতে মহামারীর মধ্যেও চীন তাদের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত লক্ষ্য অর্জনের প্রচেষ্টা বন্ধ করেনি। ভারতের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেছেন, “আমরা এটার চেয়ে এক ধাপ দূরে আছি কিন্তু চীনের দ্বিমুখী নীতি এবং ছোট ও দুর্বল প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি তাদের যে আগ্রাসী আচরণ, এবং অন্যান্য দেশগুলো (যেমন তাইওয়ান, তিব্বত ইত্যাদি) যাতে তাদের দাবি নিয়ে সংবেদনশীল থাকে, সেই জোর দাবি এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে”।
সার্বভৌমত্বের দাবির ব্যাপারে ভিয়েতনাম জাতিসংঘে প্রতিবাদ করার তিন দিন পর চীনের জাহাজগুলো ভিয়েতনামের একটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ওই ঘটনার পর চীনের এই তৎপরতা বাড়লো। চীনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ফিলিপাইন্স থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত প্রতিবাদ করেছে। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে গিয়ে ম্যানিলা একটি বিবৃতি দিয়েছে, যাতে ভ্রু কুচকে গেছে অনেকের। এতে বলা হয়েছে, “আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে কতটা আস্থা হারিয়ে গেছে এবং ফিলিপিনো জেলেদের জীবন রক্ষার জন্য ভিয়েতনাম যে মানবিক তৎপরতা দেখিয়েছে, সেটা কতটা আস্থা তৈরি করেছে”। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন দক্ষিণ চীন সাগরে ‘চীনের দুর্ব্যবহারের’ মাত্রা বেড়ে গেছে এবং মহামারী মোকাবেলার বর্তমান প্রচেষ্টা থেকে এটা মনোযোগ সরিয়ে দিচ্ছে।
ফিলিপাইন্স অস্বাভাবিক উদাহরণ সৃষ্টি করে চীনের বিরুদ্ধে দ্বৈত প্রতিবাদ করেছে। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন এবং পশ্চিম ফিলিপাইন সাগরে ফিলিপাইনের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের প্রতিবাদে তারা এটা করেছে।
গত সপ্তাহে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগি পূর্ব চীন সাগরে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের কাছে জাপানী জলসীমায় জাহাজ পাঠানোর কারণে চীনের প্রতিবাদ করেছেন। জাপান বলেছে যে, চীনা জাহাজ জাপানের জলসীমায় প্রবেশ করেছে এবং এমনকি একবার জাহাজগুলো ৯০ মিনিট ধরে সেখানে বিচরণ করে।
এর জবাবে মার্কিন একটি যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ার প্রণালীতে এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বারের মতো প্রবেশ করে। গত সপ্তাহে, মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো এমনকি মালয়েশিয়ার পাশে বিতর্কিত জলসীমার মধ্যেও প্রবেশ করেছিল। চীনের জাহাজগুলো মালয়েশিয়ার একটি তেলবাহী জাহাজকে উত্যক্ত করছিল কয়েক সপ্তাহ ধরে। সেটা প্রতিহত করতেই মার্কিন জাহাজ সেখানে প্রবেশ করে। চীনের বিমানবাহী রণতরী তাইওয়ানের কাছাকাছি চলে যাওয়ার কারণে এই পদক্ষেপ নিলো যুক্তরাষ্ট্র।