পারভেজ,কলাপাড়া(পটুুয়াখালী) প্রতিনিধি ঃ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নোভেল করোনা পরিস্থিতি ও আসন্ন পবিত্র মাহে রমজানকে পূঁজি করে অসাধু ব্যবসায়ীরা সক্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করেছে। এরা লকডাউনে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর সীমিত সরবরাহ ও পরিবহণ খরচ বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে সিন্ডিকেট করে বাজারে চাল, ডাল, আলু, পিয়াঁজ, রসুন, চিনি, আদা ও ব্লিসিং পাউডারসহ হাত ধৌত করার কাজে ব্যবহৃত পণ্য সামগ্রীর দাম বাড়াচ্ছে।তবে বাজারে অনাকাঙ্খিত ভাবে মূল্য বেড়েছে আদা ও ব্লিসিং পাউডারের। এতে বাজার পরিস্থিতি দিন দিন অস্বাভাবিক হয়ে ওঠায় বিপাকে পড়ছেন সীমিত আয়ের মানুষ। যদিও এনিয়ে স্থানীয় প্রশাসন বলছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য সহনীয় রাখতে নজরদারী বাড়ানো হচ্ছে।ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নিয়ে সভা করা হচ্ছে। মূল্য তালিকা প্রদর্শনের নির্দেশনাসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। তবুও থেমে নেই সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তারা স্বল্প আয়ের মানুষকে বিপাকে ফেলে অধিক মুনাফা লাভের আশায় চালসহ নিত্য পণ্যের মজুদ বাড়াচ্ছে তাদের গুদামে। -তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহ পূর্বে প্রতি কেজি পিঁয়াজের মূল্য ছিল ৩৫, বর্তমানে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা মূল্যে। প্রতি কেজি আলু ছিল ২২ টাকা বর্তমানে ২৬ টাকা। প্রতি কেজি রসুন ছিল ৭৫ টাকা বর্তমানে তা বিক্রী হচ্ছে ১১০ টাকা। প্রতি কেজি সোলাবুট ছিল ৭০ টাকা বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা মূল্যে। প্রতি কেজি মুশুরী ডাল ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে ১১০ টাকা। সয়াবিন তেল ছিল ৯০ টাকা বর্তমানে ১০০ টাকা। চিনি ছিল ৬০ টাকা বর্তমানে ৬৫ টাকা। প্রতি কেজি আদা ছিল ১৪০ টাকা বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ২৭০ টাকা মূল্যে। তাও বাজারে সব দোকানে আদার সরবরাহ নেই। প্রতি কেজি ব্লিসিং পাউডার ছিল ৬০ টাকা কদিনের ব্যবধানে তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা মূল্যে। হ্যান্ড ওয়াশ ডেটল, স্যাভলন’র সরবরাহ নেই বাজারে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার সামগ্রী যেন উধাও হয়ে গেছে বাজার থেকে।এছাড়া গত এক সপ্তাহ পূর্বে প্রতিবস্তা নূরজাহান টেপু চালের মূল্য ছিল ১৪৫০, বর্তমানে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২২৫০ টাকা মূল্যে। সাদা মোটা ছিল ১৭০০ বর্তমানে তা ২২০০। দাদা মিনিকেট ছিল ২৩০০ বর্তমানে ২৯০০। বালাম ২৮ ছিল ১৮০০ বর্তমানে তা ২৪০০। কাজল মোটা ছিল ১২৫০ বর্তমানে তা ১৯০০। স্বর্ন মুশুরী ছিল ১৫০০ বর্তমানে ২২০০। এছাড়া গত এক সপ্তাহ পূর্বে প্রতিবস্তা পাইজাম চালের মূল্য ছিল ২২০০, বর্তমানে বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা মূল্যে। এতে খুচরা বাজারে প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের মূল্য বেড়েছে ১০-১৬ টাকা।একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, এবছর সরকার কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় মাঠ পর্যায় থেকে সরাসরি ধান ক্রয়ের ফলে মিল মালিকদের কাছে চালের মজুদ নেই। এমনকি সরকার মিল মালিকদের চেয়ে ভাল দামে ধান কেনায় মিল মালিকরা এবছর তাদের কাঙ্খিত মূল্যে কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করতে পারেননি। তাছাড়া এ অঞ্চলের বাজারে বেশির ভাগ চাল আসে দিনাজপুর, গোবিন্দ গঞ্জ থেকে।লাগাতার লকডাউনে চাল সরবরাহ না থাকায় পাইকারী বাজারে বস্তা প্রতি চালের মূল্য বেড়েছে ৫০০-৮০০ টাকা হারে। খুচরা বাজারে যা আরও বেশি। তবে পরিস্থিতি আগামী ১৫দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলে জানায় সূত্রটি।কেননা দেশে এবছর বোরো ধানের উৎপাদন ভাল হয়েছে। বোরো ধান প্রক্রিয়াজাত হয়ে বাজারে চাল আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে চলে আসবে। তবে কিছুটা কৃত্রিম সংকটের কথাও বলছেন কেউ কেউ।কলাপাড়ায় একাধিক অসাধু ব্যবসায়ী রয়েছেন। যারা অধিক মুনাফার জন্য সরকারী ভিজিডি, ভিজিএফ, ফেয়ার প্রাইস, ওএমএসসহ সকল ধরনের চাল ও গম ক্রয় করেন। খাদ্য গুদাম, খাদ্য অধিদপ্তর ও অসৎ জনপ্রতিনিধিদের সাথে গোপন কানেকশনে এদের কেউ কেউ এখন ধন কুবেরে পরিনত হয়েছে। এদের রয়েছে প্রকাশ্যে, গোপনে একাধিক গুদাম। যাতে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার লক্ষে গুদামজাত করা হয়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখার দাবি সূত্রটির।অপরদিকে সিন্ডিকেট করে বাজারে নিত্য পন্যের সরবরাহ কমিয়ে সংকট সৃষ্টি করে দাম বৃদ্ধি করার কথা জানিয়েছে একটি সূত্র। গত এক সপ্তাহ ধরে বাজার থেকে আদা উধাও। বর্তমানে সীমিত আকারে সরবরাহ করে প্রতি কেজি আদার দাম বাড়িয়েছে ১৩০-১৪০ টাকা। এক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতির লকডাউন, অতিরিক্ত পরিবহণ খরচের কথা বলছেন জায় ব্যবসায়ীরা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিত্য পণের এক খুচরা বিক্রেতা জানান, জায় ব্যবসায়ী কজন মিলে সিন্ডিকেট করে ঢাকা থেকে মাল এনে বাজারে সরবরাহ করছেন।ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনা অনুসরন করে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য সহনীয় রাখতে বাজারে নজরদারী বাড়ানো হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। রমজান মাসে জনসাধারনের স্বার্থে বাজার গুলোতে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করে দেয়া হবে।