ব্যুরো অফিস সুনামগঞ্জ :: খাদ্য সহায়তা চেয়ে সরকারি তথ্য সেবার ৩৩৩ নম্বরে ফোন করেন নুরুল হক জীবন (২৩)। তিনি তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের ছেলে।
তিনি শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৫ টায় সরকারি তথ্য সেবার নাম্বারে ফোন দিয়ে করোনাভাইরাসের সংকটকালীন সময় খাদ্য সহায়তা চান। এরপর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করা হয় এবং জরুরি ভিত্তিতে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য বলা হয়।
এর প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেনকে পরিবারের খোঁজ নিতে বলেন। সেই মোতাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য খাদ্য সহায়তা চাওয়া পরিবারের খোঁজ নিতে গিয়ে অবাক হন। কারণ যে পরিবার থেকে খাদ্য সামগ্রী সহায়তা চাওয়া হয়েছে সেই পরিবার এলাকা বিত্তশালী। তাদের ত্রাণের তো দরকার নেই, উল্টো তারা ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের সামর্থ্য রাখেন।
তারপরও শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাদের বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী প্রেরণ করেন। কিন্তু তখন এসব খাদ্য সামগ্রী নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জীবন। এমনকি তিনি বিব্রত উল্লেখ করে প্রশাসনের লোকজনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তখন জীবনের বাবা আব্দুস সোবহান এসে ঘটনার জন্য উপজেলা নির্বাহীর কাছে ক্ষমা চেয়ে খাদ্য সামগ্রী গ্রহণ করেন।
উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের মোদেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সোবহানের বাড়ি।
এদিকে এ ঘটনা এলাকায় জানাজানি হওয়ার পরপরই এলাকায় বিব্রতকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। করোনাভাইরাসের সময় সরকারি একটা নাম্বারে ফোন দিয়ে খামখেয়ালিপনা করায় ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, যারা এলাকার মানুষকে ত্রাণ সামগ্রী দেয়ার ক্ষমতা রাখেন, তারা এভাবে সরকারি নাম্বারে ফোন দিয়ে সাহায্য চেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন এমনটা কাম্য নয়। কারণ দুর্যোগের এ সময় সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
আর স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য জাকির হোসেন বলেন, গ্রামের মধ্যে নুরুল হক জীবনের পরিবার বিত্তশালী। এবং তাদের কোন খাদ্য সংকট নেই। তারপরও দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে ৩৩৩-তে ফোন করে এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জি বলেন, ৩৩৩-তে কল করে খাদ্য সহায়তা চাওয়ার পর আমরা জরুরি ভিত্তিতে তার বাড়িতে খাদ্য সামগ্রী পৌঁছানোর পর জানতে পারি, নুরুল হক জীবনের পরিবারটি গ্রামের মাঝে অত্যন্ত সচ্ছল ও বিত্তবান। অবশ্য পরে তাদের এমন কর্মকাণ্ডে খাদ্য সহায়তা চাওয়া লোকটি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তবে এমনটি কোন ভাবেই কাম্য নয়। কারণ তাদের ঘরে যথেষ্ট খাবার মজুদ রয়েছে এবং ত্রাণের প্রয়োজন নেই।