করোনাভাইরাস জনিত দুর্যোগ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহায়তায় ৮৭ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনে সরকারের কাছে প্রস্তাব করেছে বিএনপি। একই সঙ্গে অবিলম্বে দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি আপত্কালীন অর্থনৈতিক টাস্ক ফোর্স গঠনেরও দাবি করেছে বিএনপি।
শনিবার বেলা ১১টায় গুলশানের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ দাবি জানান। এ সময় তিনি করোনাভাইরাস জনিত বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সম্ভাব্য মহাদুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ২৫টি প্রস্তাব তুলে ধরেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সহায়তায় এই প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে।
বিএনপি মনে করে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের গার্মেন্টসসহ রপ্তানি শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার যে প্রণোদনার ঘোষণা করেছেন, তা যথেষ্ট নয়। বিএনপির অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশে তাঁর ভাষণে বিশাল জনগোষ্ঠীকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো পরিকল্পনা বা এ জন্য বরাদ্দের কথা বলেননি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির ৩ শতাংশ অর্থের সমন্বয়ে ৮৭ হাজার কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল ঘোষণা করতে হবে। এর মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে স্বল্প-মেয়াদি, অনতিবিলম্বে। কিছু মধ্যমেয়াদি এবং কিছু দীর্ঘমেয়াদি। স্বল্প-মেয়াদি খাতে ৬১ হাজার কোটি টাকা, আর মধ্য-মেয়াদি খাতে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে ৮ হাজার কোটি টাকা অদৃশ্য খাত এবং অন্যান্য খাতে ব্যয় করা যাবে। যাতে শাটডাউন প্রত্যাহার হলে সব খাতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাধারণ ছুটি-পূর্ব স্তরে ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, অর্থনৈতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বিএনপির এই প্রস্তাবনা জরুরিভাবে বাস্তবায়নের জন্য তারা সরকারের কাছে পাঠাবেন।
দিনমজুরদের জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা‘ দিন এনে দিন খায়’ এমন সব শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, হকার, পরিবহন শ্রমিকদের প্রাথমিকভাবে এপ্রিল-মে-জুন এই তিন মাসের জন্য জনপ্রতি ১৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করে অনতিবিলম্বে ঘরে ঘরে গিয়ে নগদ অর্থ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বিএনপি। এ ক্ষেত্রে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের একটি বক্তব্যের উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, নগদ টাকা দিয়ে দরিদ্ররা দুর্যোগ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারে। তাই চাল-ডাল-লবণ-তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী ক্রয়ে দুর্নীতি ও জটিলতা এড়াতে পণ্যসামগ্রীর পরিবর্তে নগদ অর্থ দিতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে এদের চিহ্নিত করতে হবে। তবে নগদ অর্থ প্রদানে কোনোভাবেই রাজনৈতিক বা দলীয় লোকজনকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে না। প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে প্রাথমিকভাবে ৩ মাসের জন্য আশ্রয়হীনদের অস্থায়ী আবাসন ও প্রয়োজনে তৈরি খাবার সরবরাহ করে তাদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ন্যূনপক্ষে ৮ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
বিএনপি বলেছে, ৮০ লাখের বেশি শ্রমিক বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কাজ করছে। তাদের নগদ সাহায্য দিতে হবে। যাদের মজুরি-বেতন বন্ধ হয়ে গেছে, তাদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার আওতায় এটা করতেই হবে। আগামী ছয় মাস ব্যাপী সব অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরে কর্মরত শ্রমিকদের নগদ অর্থ সাহায্য দিয়ে জীবনযাত্রায় সমর্থন দিতে হবে। এই খাতে ছয় মাসের জন্য দুই কিস্তিতে প্রথম তিন মাসের এবং পরবর্তী কিস্তিতে অবশিষ্ট টাকা নগদ প্রদান করা যেতে পারে। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। ব্যাংকিং চ্যানেলে শ্রমিকদের স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে কিস্তির নগদ টাকা পরিশোধ করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র দেখে এদের চিহ্নিত করতে হবে।
বিএনপির দাবি, গার্মেন্টস ও রপ্তানিমুখী শিল্প শ্রমিক শ্রেণিকে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে স্ব স্ব অ্যাকাউন্টে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের একটি নগদ অর্থ সাহায্য দিতে হবে। পরবর্তীতে তা আরও ৩ মাসের জন্য বৃদ্ধি করা যেতে পারে। মালিকপক্ষদের এ টাকা বরাদ্দ না করে শ্রমিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে করে তারা আর্থিক সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এ জন্য প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে।
গার্মেন্টস ও রপ্তানি শিল্প শ্রমিকদের মতো প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর আওতায় পরিচালিত শিল্প-কারখানার শ্রমিকদের জীবনযাত্রায় নগদ অর্থ সাহায্য দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। এর কারণ হিসেবে তারা বলেছেন, গার্মেন্টস শিল্পের মতো এসব প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প-কারখানার শ্রমিকেরাও একই দুর্যোগের শিকার। এদের ৬ মাসের জন্য নগদ অর্থ সাহায্য করতে হবে। খাদ্য জোগান দিতে দুর্নীতি ও জটিলতা এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সামরিক বাহিনী অর্থ বিতরণ করবে। এ খাতে প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করতে হবে। জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নিয়োগপত্র দেখে এদের চিহ্নিত করতে হবে।
প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য হাজার কোটি টাকা বিএনপি বলেছে, ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ থেকে বাধ্য হয়ে কয়েক লাখ প্রবাসী শ্রমিক বাংলাদেশে ফিরেছেন। অনেকেই শূন্য হাতে দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন। এদের চিহ্নিত করে প্রত্যেক প্রবাসীকে তিন মাসের জন্য মাসিক ১৫ হাজার টাকা আপত্কালীন আর্থিক সাপোর্ট প্রদান করতে হবে। যাতে করে তারা যথাসময়ে পুনরায় বিদেশে স্বীয় কর্মস্থলে ফেরত যেতে পারেন। এ জন্য এ খাতে ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে হবে। একই সঙ্গে যে সব দেশে বিভিন্ন দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশি প্রবাসীদের চাকরি সুনিশ্চিত করতে হবে। তাদের যেন ছাটাই (Pay off) না করতে হয়। স্বাস্থ্য খাতে ১৫ হাজার কোটির টাকার সুপারিশ
স্বাস্থ্য খাত এবং যারা করোনা মোকাবিলার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত সেসব হাসপাতাল এবং সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প