হলিবিডি প্রতিনিধিঃ জামালপুর সদর হাসপাতালে ডায়াবেটিস, তীব্র শ্বাসকষ্ট ও জ্বর নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের স্বজনরা তড়িঘড়ি মরদেহ নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করেছেন।
এ নিয়ে ওয়ার্ডের দু’জন নার্সের মধ্যে করোনা সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তারা বেশ চিন্তিত রয়েছেন।
আজ শনিবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। তবে ওই রোগী করোনাভাইরাস সংক্রমণে মারা যাননি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৪৫ বছর বয়স্ক ওই রোগীর বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বিয়ারা পলাশতলা গ্রামে। শনিবার দুপুর ২টার দিকে রোগীর স্বজনরা তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট উপসর্গ গোপন করে ডায়াবেটিস রোগীর কথা বলে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কর্তব্যরত মেডিক্যাল অফিসার ডা. সৌমিত্র কুমার বণিক রোগীর শরীরের তাপমাত্রা ও শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য উপসর্গ নিশ্চিত না হয়েই রোগীকে ডায়াবেটিসের রোগী হিসেবেই মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়ে রোগীর ব্যবস্থাপত্রে স্যালাইন ও কিছু ওষুধ লিখে দেন।
রোগীকে মেডিসিন ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত দু’জন নার্সের মধ্যে নার্স আরফিনা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে ওই রোগীর ১০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। এ ধরনের উপসর্গ টের পেয়েই সহকর্মী অন্য নার্স খালেদা ইয়াসমিনকে জানানোর সাথে সাথে তাদের দু’জনের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক দেখা দেয়। তারা দু’জন রোগীর ব্যবস্থাপত্র নিয়ে জরুরি বিভাগে গিয়ে ডাক্তার সৌমিত্র কুমার বণিকের সাথে কথা বলে জানতে চান এরকম উপসর্গের রোগীকে কেন ওয়ার্ডে পাঠানো হলো।
নার্সদের কোনো ব্যক্তিগত নিরাপত্তা পোশাক ও অন্যান্য সরঞ্জাম না থাকার বিষয়টিও ওই ডাক্তারকে বলেন তারা।
জরুরি বিভাগের ডাক্তার ওই নার্সদের কথা শুনেই রোগীকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ডের সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে আতঙ্কিত দু’জন নার্স রেফার্ডের ফরমে রোগী রেফার্ডের বিষয়টি লিখছিলেন। এরই মধ্যে বেলা আড়াইটার দিকে রোগী মারা যায়।
রোগী মারা যাওয়ার সাথে সাথেই তড়িঘড়ি করে একটি প্রাইভেট অ্যাম্বুলেন্সে করে মৃত রোগীকে নিয়ে হাসপাতাল ত্যাগ করে বাড়ির দিয়ে রওনা হন রোগীর স্বজনরা।
অ্যাম্বুলেন্সে মরদেহ উঠানোর সময় ওই রোগীর একজন স্বজন দাবি করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ডায়াবেটিসের কারণে রোগী কয়েকমাস ধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রোগীর শরীরে হালকা জ্বর ছিল। কিন্তু শ্বাসকষ্ট ছিল না। ওয়ার্ডে ভর্তি করার দশ মিনিটের মাথায় তিনি মারা যান। ’
খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন ওয়ার্ডের আতঙ্কগ্রস্ত ওই দুই নার্সের মধ্যে একজন বাসায় চলে গেছেন গোসল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হতে। কর্তব্যরত অন্য নার্স খালেদা ইয়াসমিন বললেন, ‘জরুরি বিভাগ থেকে তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্টের কোনো রোগীকে যদি পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই ওয়ার্ডে পাঠায় তাহলে এখানে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা কোথায়। আমরা যে কিছুক্ষণ এই রোগীর সেবা দিলাম। রোগীর শরীরে হাত দিলাম। তার কাছে গেলাম। তাহলে আমাদের এখন কি অবস্থা হবে। সেখানে রোগীর লোকজনরাও ছিলেন বেশ কয়েক জন। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। মারা যাওয়ার পরপরই রোগীর লোকজনরা মৃত্যু সনদ না নিয়েই তড়িঘড়ি করে মরদেহ নিয়ে চলে গেছেন। ’ এ সময় এই নার্সকে খুবই দু:শ্চিন্তাগ্রস্ত মনে হচ্ছিল।
তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিশ্চিত না হয়েই কেন রোগীকে ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দিলেন, এমন প্রশ্নে জরুরি বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. সৌমিত্র কুমার বণিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রোগীর লোকজনরাই বলছিল রোগীর ডায়াবেটিস নীল হয়ে গেছে। তাই তাকে দ্রুত ভর্তির পরামর্শ দেই। পরে ওয়ার্ডে যাওয়ার পর নার্সরা রোগীর ১০৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস জ্বর ও তীব্র শ্বাসকষ্ট উপসর্গ থাকার বিষয়টি জানানোর সাথে সাথে তাকে ময়মনসিংহে রেফার্ড করার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু ততক্ষণে রোগী মারা যায়। ’
জামালপুর সদর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান ফকির এ প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মৃত রোগীর বিভিন্ন উপসর্গের ইতিহাস হাসপাতালের নথিপত্রে সংরক্ষিত আছে। কর্তব্যরত দু’জন মেডিক্যাল অফিসার নিশ্চিত করেছেন যে, ওই রোগীর তীব্র জ্বর ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও করোনাভাইরাসের কারণে তিনি মারা যাননি। এ নিয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। বিষয়টি আমি জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জনকে অবহিত করেছি।