হলিবিডি প্রতিনিধিঃ বিশ্বের সব দেশেই করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে মাস্ক ব্যবহার বেড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বেশি সচেতন হয়ে নগরবাসীরা মাস্ক কেনায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে গতকাল রবিবার দেশে করোনায় তিনজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক ক্রয়ে খুলনার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় উপচে পড়ে। বিভিন্ন ফার্মেসি, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর, সুপার শপসহ বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতের দোকানেও ভীড় সাধারণ মানুষের। আর এই সুযোগেই ফার্মেসী ও দোকানগুলো ইচ্ছামতো মাস্কের মূল্য হাঁকাচ্ছে। প্রতি মুহূর্তেই দাম বাড়ছে মাস্কের। হঠাৎ করেই চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অতিরিক্ত দামে মাস্ক বিক্রি করছেন কিছু অসাধু বিক্রেতা। ৫ টাকার মাস্ক কিনতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। অর্থাৎ ছয় থেকে আট গুণ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছে। আতঙ্কের কারণে বাধ্য হয়ে বেশি দামে তা কিনছেন সাধারণ মানুষ। একদিকে হঠাৎ করে বাজারে চাহিদা তৈরি হওয়ায় যেমন সংকট তৈরি হয়েছে, তেমনি এতদিন চীন থেকে মাস্ক আমদানি বন্ধ থাকায় পণ্যটির দাম বাড়িয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
গতকাল রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর হেরাজ মার্কেটের সামনে যেতেই দেখা যায় ফুটপাতে মাস্ক কিনতে সাধারণ মানুষের ভীড়। সেখানে থাকা দু’টি দোকানে যেমন খুশি তেমন দাম হাকাচ্ছেন ওই ব্যবসায়ীরা। সেখানে বিপ্রসাদ দাস নামে এক ব্যক্তি এসে মাস্কের দাম শুনতে চায়। ফুটপাতের ওই দোকানী তার কাছে ভালো মানের একটি মাস্কের দাম হাকান ২০০ টাকা। তিনি উত্তেজিত হয়ে তাকে বলেন, মগের মল্লুক পেয়েছেন নাকি। সন্ধ্যায় এই মাস্ক কিনেছি ১০০ টাকা দিয়ে। মাত্র ২ ঘন্টার ব্যবধানে ১০০ টাকা বেড়ে গেল। এটি কি এই সময়ের মধ্যে আমদানি হয়েছে। এমন অরাজকতা প্রশাসনকে জানানো উচিত। এ সময় তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, সন্ধ্যায় হুগলি বেকারির পাশে ফুটপাতের দোকান থেকে একই মাস্ক ১০০ টাকায় কিনেছি। অথচ এখন ২০০ টাকা দাম চাচ্ছে। এটি অরাজকতা ছাড়া আর কি?
হেরাজ মার্কেটের ভিতরে গিয়ে দেখা যায় মাস্কের জন্য লাইন লেগেছে। মানুষ ফার্মেসীগুলোতে ঘুরছে মাস্কের জন্য। বেশী দাম চাওয়ায় অনেকে দোকানে দোকানে ঘুরছে। ৫ টাকার মাস্কের মূল্য চাওয়া হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা। আর দু’দিন আগেও ভালোমানের যে মাস্ক ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে তারই মূল্য চাওয়া হচ্ছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকা। বিক্রেতারা ইচ্ছে খুশি মতো দাম হাকাচ্ছে। কেউ কেউ একই মাস্ক ৪০০ টাকাও চাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ ব্যবসায়ীদের কাছে নিরুপায় হয়ে সাধ্যের মধ্যে থেকে মাস্ক কিনছেন।
মাস্ক কিনতে আসা আরিফুল ইসলাম বলেন, মাস্ক কেনার জন্য অন্তত ১০টি ফার্মেসিতে গেলেও দাম বেশি বলছেন বিক্রেতারা। তিনি বলেন, সকালে ২০ টাকায় কেনা মাস্ক এখন দাম হাকাচ্ছে ৪০ টাকা। এগুলো তো ওয়ানটাইম মাস্ক।
খুলনা সার্জিক্যালের বিক্রেতার কাছে ওয়ানটাইম এক প্যাকেট (৫০ পিস) মাস্কের দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন ২ হাজার টাকা। এতে প্রতি পিস মাস্কের পাইকারী মূল্য আসে ৪০ টাকা করে। এতো দাম কেন বললে তিনি বলেন, ঢাকায় ফোন করে মাস্কের দাম জানতে চাইলে তারা বলেছে এক বক্স মাস্ক ২ হাজার ২শ’ টাকা। সোমবার দাম আরো বেড়ে যাবে।
মহানগর সার্জিক্যালের বিক্রেতা বলেন, কাপড়ের তৈরি মাস্ক প্রতি পিস ৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি করছেন তিনি। হঠাৎ করেই চাহিদা বেড়ে গেছে। মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের খুলনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শিকদার শাহীনুর আলম বলেন, মানি রিসিটসহ লিখিত অভিযোগ করলেই ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব। অন্যথায় কোন ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।