হলিবিডি প্রতিনিধিঃ অবশেষে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার (৪ মার্চ) দুপুর ১২ টার দিকে মৃত্যু হয়েছে সাতক্ষীরার তালায় রহস্যজনক অগ্নিদগ্ধ ফারহানা আক্তার রত্নার (২৬)। গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক দেড় টার দিকে তালার মোবারকপুরস্থ ভাড়া বাড়িতে রহস্যনকভাবে অগ্নিদগ্ধ হন বিউটিশিয়ান গৃহবধূ রত্না। নিহত রত্না খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির মালত গ্রামের রোকন সরদারের মেয়ে ও কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের খাস মধুরামপুরের হাসিবুর রহমান সবুজের স্ত্রী।
স্বামীর চাকুরীর সুবাদে সে স্বামীর সাথে তালার মোবারকপুরস্থ জনৈক অসীম সাধুর বহুতল ভবনের ১ম তলায় ভাড়া থাকত। সর্বশেষ ঘটনায় রত্নার বাবা রোকন সরদার বাদী হয়ে ২৪ ফেব্রুয়ারি তালা থানায় তার সাবেক স্বামী ও তার ভাইসহ ৪ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন। যার নং-১০
পারিবারিক সূত্র ও এলাকাবাসী জানায়, গত ২০০৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ফারহানা আক্তার রত্নার সাথে প্রথমে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভরত ভায়না গ্রামের সোহরাব হোসেন শেখ’র ছেলে মিজানুর রহমান শেখ (৩৫) এর সাথে পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের এক ছেলে সাজিদ (১০) রয়েছে। তবে বছর খানেক পূর্বে যৌতুক নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এনিয়ে পাইকগাছা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঐ মামলার ধার্য দিন ছিল।
এরপর রত্না পাইকগাছা উপজেলার মামুদকাটি মোড়ের একটি দ্বিতল ভবনের রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে বিউটি পার্লারের ব্যবসা শুরু করেন। এর পাশের রুমে তার বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান ভাড়া থাকতো। প্রথমে পরিচয় ও পরে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় লোক লজ্জায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্নহত্যার চেষ্টা চালায় রত্না। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে বাধ্য হয়ে হাসিবুর রহমান তাকে গত ৪ নভেম্বর বিয়ে করে। এরপর ৮ নভেম্বর তালার মোবারকপুরস্থ অসীম সাধুর বাড়ীর ১ম তলায় ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস শুরু করেন।
রত্নার বর্তমান স্বামী হাসিবুর রহমান সবুজ জানান, ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক দেড় টার দিকে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে পাশের মোড়ে মশার কয়েল কিনতে যান। এর ৩/৪ মিনিট পর দোকানে পৌছানোর আগেই বাসা থেকে স্ত্রী রত্নার আত্নচিৎকারের শব্দ শুনে ফের বাসায় স্ত্রীকে দগ্ধ অবস্থায় দেখে। এসময় বাড়ির মালিক অসীম সাধু ও তার স্ত্রী সাথী রাণীর সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তালা হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। পরে সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে নেয়া হয়। তার দাবি, এরআগে স্ত্রীর চিৎকারে তিনি বাসায় ফেরার পথে গলি দিয়ে একাধিক যুবককে দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। তার ধারণা ও স্ত্রীর দেয়া বয়ানে জানানো হয়, তিনি বাসা থেকে বেরোনোর পর কেউ তাদের বাসায় নক্ করে দরজা খুললে আকস্মিক রত্নার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুণ দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে তার শরীরের সিংহভাগ (৭৫%) পুড়ে যায়। এঘটনায় মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
ঘটনার রাত ১ টার দিকে হাসিবের বাসায় ফেরা এবং দেড়টার দিকে বাসা থেকে বেরিয়ে মশার কয়েল কিনতে যাওয়া এবং কয়েক মিনিটের মধ্যে তার অগ্নিদগ্ধ হওয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। ধারণা করা হচ্ছে, কেউ তার প্রথম স্বামীকে ফাঁসাতে পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটিয়ে থাকতে পারে।
সর্বশেষ ৪ মার্চ দুপুর ১২ টার দিকে ঢাকা মেডিকেলের বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হলে ৫ মার্চ সকালে তার লাশ পিত্রালয় পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনির মালত গ্রামে নিয়ে দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
এ বিষয়ে তালা থানার ওসি (তদন্ত) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, তদন্তপূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে তালা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মেহেদী রাসেল জানান, ঘটনায় তালা থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছে পুলিশ।(বিস্তারিত আসছে)