মোঃ আব্দুল আলী দেওয়ান (আব্দুল্লাহ)- চাঁদপুর প্রতিনিধিঃ বাংলাদেশ একটি ঋতু প্রধান দেশ। পৃথীবির অন্য কোন দেশে এমন ভাবে ঋতুর আবর্তন ঘটেনা যেমনি ভাবে বাংলাদেশে ঋতুর পরিবর্তন হয়। আমাদের দেশে বারো মাসে ছয়টি ঋতুর মিলন মেলা হয়। ছয়টি ঋতুর মধ্যে পৌষ ও মাঘ মাসের শীত মৌসুম বা ঋতু অন্যতম। এই মৌসুমে মানুষ চাদর মুরি দিয়ে থাকে শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষার জন্য, সবাই শীতের কাপুনিতে ঝড় হয়ে থাকে একত্রিত হয়ে গল্পের আড্ডায়, নানা মানুষ আগুন পোহায় কোন নির্দিস্ট স্থানে খড়কুটা দিয়ে।
কিন্তু এই শীতের গুরুত্ব ও প্রভাব বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে আনন্দিতও করে। শীতকে উপলক্ষ করেই হরেক পিঠার আয়োজন, পায়েস রান্না, ভাপা পিঠার ধুমধাম উৎসব ঘরে ঘরে হয়ে থাকে। যার ফলে শীতকাল আসলেই গ্রাম বাংলার মানুষ যেন এক নতুন আমেযে উৎসুখ হয়ে উঠে। বধুরা সকালের রোদে বসে রোদ পোহানো ও অন্যান্য কাজ নিয়ে শীতের আনন্দন উপভোগ করে। শীতের মৌসুম সবচাইতে বেশী যে কারনে সকলের কাছে প্রিয় তা হল খেজুরের তাজা রস ও সেই রসের পায়েস খাওয়া। প্রচন্ড শীতের মধ্যেও গাছের বাকল ছাড়িয়ে গাছিয়ে বা কৃষকরা হাড়ি দিয়ে থাকে গাছের মধ্যে যার ভিতরে সারারাত রস পরে জমতে থাকে এবং সকালে রসে ভরা হাড়ি গাছিয়ে বা কৃষক মনের আনন্দে সংগ্রহ করে। কখনো কখনো গ্রামের যুবকরা রাতের আঁধারে এই রসের হাড়ি চুরি করে থাকে যা একটি আনন্দের অন্যতম অংশ হিসেবে গ্রামের যুবকদের কাছে পরিচিত। খেজুরের এই বিখ্যাত রস সাধারন মানুষ থেকে সর্বস্তরের মানুষ কৃষকদের কাছ থেকে সুলভ মুল্যে নিয়ে পরিবারে সকলের সাথে নানা আয়োজনের মাধ্যমে খাবার হিসেবে গ্রহন করে।
আমাদের চাঁদপুর একটি কৃষি অঞ্চল ও বাংলাদেশের সকল জেলাগুলোর একটি অন্যতম সুন্দর ও গ্রাম প্রধান জেলা। এখানে শীতের মৌসুমে অনেক সহজ ভাবে ও সতেজ তাজা খেজুরের রস পাওয়া যেত। যার ফলে তৈরী হত কৃষকদের ঘড়ে ঘড়ে পায়েস ও রসের মিষ্ঠান্ন খাবার এই তাজা খেজুরের রসের মিঠাই। যা চাঁদপুরের গৌরবকে বাড়িয়ে দিত বাংলার আনাচে কানাচে। কিন্তু আজ আমরা দেখতে পাইনা সেই শীতের সকালে গাছিয়াদের গাছ ছাটাই করার দৃশ্য, দেখিনা রস নিয়ে হাটে যাওয়া চাদর মুরি দিয়ে ব্যাস্ততম মানুষ, নেই রসের গন্ধের লেশমাত্র, মৌমাছিদের ভন ভন শব্দের ঝংকার! হারিয়ে গেছে এবং হারিয়ে যাচ্ছে আজ আমাদের চাঁদপুর সহ সারাদেশ হতেই এমন শীতের সকালের অন্যতম উপাদান ও আমেজের উৎস সকলের প্রিয় খেজুরের রস!
পায়েস ও রস প্রিয় গ্রামের মানুষরা বহু চেস্টা করেও খাটি রস সংগ্রহ করতে পারেনা। রস কৃষকরা বলেন, এখন আর আগের মত খেজুর গাছ নেই যার ফলে তারাও রস সংগ্রহ করতে পারেনা। দিন দিন এই গাছ কমে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে আরো দুর্লভ হয়ে পরবে বলে তারা মনে করেন। তাই স্বাদ ও সাধ্য থাকা সত্তেও পাচ্ছেনা খেজুরের রস শীতের মৌসুমে। মনে হয় আজ তা সোনার হরিন কিংবা কৃষকের সোনার ডিম পারা হাসের গল্প হয়ে দাড়িয়েছে। এভাবে এক সময় চাঁদপুর সহ সারাদেশ থেকেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে প্রাকৃতিক ও উপকারি এই খেজুরের রস। হয়তোবা রুপ কথার গল্পে পরিনত হয়ে যাবে আমাদের খেজুর রসের পিঠা, পায়েশ ও মিঠাই নিয়ে। আমাদের উচিৎ নিজ নিজ উদ্যোগে খেজুরের চারা রোপন ও গাছ পরিচর্জা করা। তাহলেই পুনরায় সেই সোনালি স্বপ্নের সোনালি শীতের সকালকে ফিরে পেতে পারি। ফিরে পেতে পারবো আমাদের শীতের বিখ্যাত সুমিষ্ঠ ও তাজা খেজুর গাছ থেকে সংগৃহিত সুমিষ্ঠ রস।